Saturday, January 25, 2014

খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানে যাওয়ার পরামর্শ হাসিনার

গাইবান্ধা: পাকিস্তান ‘প্রীতির’ কারণে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া খালেদার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যতই চেষ্টাই করেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচাতে পারেন নাই, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে পারবেন না।’
শনিবার বিকেলে গাইবান্ধার শাহ আবদুল হামিদ স্টেডিয়াম মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 
নির্বাচন-পূর্ববর্তী ও নির্বাচনকালীন সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং হতাহত ব্যক্তি ও পরিবারগুলোকে সহায়তা দিতে গাইবান্ধায় আসেন প্রধানমন্ত্রী। একই কারণে এর আগে তিনি যশোরের মালোপাড়ায় যান। খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্কুলে ভর্তির সময় উনার জন্ম তারিখ একটা, বিয়ের সময় একটা, পাসপোর্টে একটা এবং জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকী ১৫ আগস্টেও উনার জন্ম দিন। শুধু নিজের নয়, তার স্বামীর জন্ম তারিখও উনি বদলে ফেলেছেন। জিয়াউর রহমানের জন্ম তারিখ ১৯ জানুয়ারি; উনি বললেন ১৮ জানুয়ারি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বিদ্যুত্, খাদ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগ, অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে দেশে উন্নয়ন হয়। এ দেশের মানুষকে কিছু দিতেই ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ মানে জনগণের সেবক।
শেখ হাসিনা বলেন, কোনো মা-বাবাকে পয়সা খরচ করে এখন বই কিনতে হয় না। সরকার তাদের হাতে বই তুলে দেয়।; বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের হরতাল, অবরোধ ও রাস্তা কাটা সত্ত্বেও এ বছর আমরা সময়মতো বই শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দিয়েছে।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার খুনিকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন, পারেন নাই। যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করতে চেষ্টা করেছেন, পারেন নাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই।’ বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি।
৫ জানুয়ারি নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু গাইবান্ধায় চার পুলিশ সদস্যসহ ১০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। তারা স্কুল-কলেজ ধ্বংস করেছে। এ সময় তিনি জানতে চান, মানুষ হত্যা, প্রিসাইডিং অফিসারের গায়ে আগুন দিয়ে, গরুকে হত্যা করে এবং ২০ হাজার গাছ কেটে ফেলে খালেদা জিয়া কী পেলেন।

বিএনপি রাজনীতি নয়, সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালায়

এর আগে গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে নির্বাচন-পূর্ববর্তী ও নির্বাচনকালীন সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ও হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, রাজনীতি করার জন্য রাজনীতি করে না বিএনপি। তারা মানুষ হত্যা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালায়। বিএনপি যা করেছে, সেটা রাজনীতি নয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন ঠেকানোর নামে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। অনেকের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। তাদের হাত থেকে নারীরাও রক্ষা পাচ্ছে না। এত বীভত্স দৃশ্য কখনো দেখিনি। বিএনপি যা করেছে, তা জঙ্গিবাদী ঘটনা।’
ক্ষতিগ্রস্তদের মনের জোর রাখার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের সন্তান ফেরত দিতে পারব না, তবে আপনাদের নিরাপত্তা দেব। আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য যা করা দরকার, তা-ই করব। দেশকে জঙ্গিবাদী হতে দেব না।’ 

স্থানীয় প্রশাসনের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে, তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। যতটা কঠিন হওয়া দরকার, ততটা কঠিন হতে হবে।’ তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত এই বিচার আইন মানবে না, তা হয় না। যেভাবে হোক, সন্ত্রাসীদের বিচার করা হবে। 

প্রধানমন্ত্রী সহিংসতায় হতাহত ও ক্ষতির শিকার হয়েছে, এমন ৭৫টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন। নিহত তিনজনের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে গাইবান্ধা শহরের অদূরে তুলশীঘাট হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। এরপর তিনি গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে গিয়ে সহিংসতায় হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

No comments:

Post a Comment