Sunday, January 19, 2014

গাইবান্ধায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে ২২ পুলিশসহ আহত শতাধিক


গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বনন্দপুর গ্রামে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যৌথবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এসআইসহ পুলিশের ২২ জন সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া জামায়াত-শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের সাতজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। রোববার সকাল সাড়ে নয়টায়ও সংঘর্ষ চলছিল বলে জানিয়েছে গ্রামবাসী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে এলাকাটিতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনীর একটি দল।

এ সময় গ্রেফতার এড়াতে স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে পুলিশ ও যৌথবাহিনীর সদস্যদের উপর ইট-পাটকেল, ককটেল ইত্যাদি নিক্ষেপ করতে শুরু করে। ফলে পুলিশও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পাল্টা টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়তে শুরু করে।

সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করলে পুলিশের এসআইসহ যৌথ বাহিনীর ২২ জন সদস্য আহত হন এবং জামায়াত-শিবিরের অন্তত ১২০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন বলে জানিয়েছেন সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোজাম্মেল হক।

এ সময় ঘটনাস্থল থেকে তিনজন্সহ পুলিশ জামায়াত-শিবিরের মোট সাত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে।

ওসি মোজাম্মেল হোসেন জানিয়েছেন, নির্বাচনপরবর্তী সময়ে সহিংসতা এড়াতে গ্রামটিতে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ-বিজিবি-র্যা ব-সেনা সদস্যদের একটি যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ও গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা করতে শুরু করলে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

এই মুহূর্তে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে জানিয়ে ওসি মোজাম্মেল হক আসামিদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে নিশ্চিত করেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে হামলা চালান। তারা পুলিশের চারজন কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ছাড়া একই সময়ে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় আরো চার ব্যক্তি নিহত হন। ওই ঘটনায় ৩২টি মামলা হয়। এতে ৬০ হাজার জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে এক হাজার ১০০ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। বাকিরা অজ্ঞাত।

এসব মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জন্য গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে সর্বনন্দপুর ইউনিয়নের সর্বনন্দপুর গ্রামে যায় পুলিশ। এ সময় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা এক জোট হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান এবং একপর্যায়ে তারা পুলিশের ভাড়া করা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেন।

পরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পুলিশ শতাধিক ফাঁকা গুলি, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা একপর্যায়ে পুলিশকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। রাতের অন্ধকারে পুলিশ সদস্যরাও সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ মাঝেমধ্যে ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

পুলিশ জানায়, অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করতে রাত প্রায় আড়াইটার দিকে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যা ব ও বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। তখন থেকে যৌথ বাহিনী কদমতলী খানাবাড়ি গ্রামটি ঘিরে রাখে। রাতে কুয়াশার কারণে তারা দ্রুত এগোতে পারছিলেন না।

No comments:

Post a Comment