Monday, January 6, 2014

লালমনিরহাট: লাঙ্গলের দুর্গে নৌকার হানা

লালমনিরহাট: লালমনিরহাট জেলার তিনটি আসনেই এবারের নির্বাচনে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগের নৌকা। ওই আসনে জাতীয় পার্টির জেলা নির্বাচন কার্যালয় লালমনিরহাট সূত্র জানায়, এর আগে ১৯৮৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনটি আসনেই জয় পেয়েছে জাতীয় পার্টি। এবারই তার ব্যতিক্রম ঘটল। তিন আসনে আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়ায় লাঙ্গলের দুর্গ লালমনিরহাটে দলের অবস্থানে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক এস কে খাজা মঈন উদ্দিন। তিনি বলেন, লালমনিরহাটের বিজয়ী আওয়ামী লীগের তিন সাংসদ তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করলে যেমন কাজ করার সুযোগ পাবেন, তেমনি জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদের যথাক্রমে লালমনিরহাট-১ এবং লালমনিরহাট-৩ আসনের মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও পরে তা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। কাজেই তাঁরা কেউ কার্যকর প্রার্থী ছিলেন না, কাগজে-কলমে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর তালিকায় ছিলেন মাত্র। কাজেই যে নির্বাচনে আমাদের কোনো পোস্টার, লিফলেট, সভা, সমাবেশ, পোলিং এজেন্ট ছিল না, আমাদের প্রার্থী সেখানে হেরে গেছেন তা আমরা মানতে রাজি নই।’
এবারের নির্বাচনে লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ প্রথমে প্রার্থী হন। পরে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। আবেদনটি মঞ্জুর না করে রিটার্নিং কর্মকর্তা এরশাদের প্রার্থিতা বহাল রাখেন।
লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুজ্জামান আহম্মেদ একমাত্র মনোনয়নপত্র দাখিলকারী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবার সাংসদ নির্বাচিত হন। এ আসনের পর পর সাতবার বিজয়ী সাংসদ জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবর রহমান এবার মনোনয়নপত্র নিলেও প্রার্থী হননি। এ আসনে আর কেউ প্রার্থী ছিলেন না।
লালমনিরহাট-৩ (সদর উপজেলা) আসনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু সালেহ মোহাম্মদ সাঈদ। এ আসনের আরেক প্রার্থী জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। কিন্তু প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মতিয়ার রহমান বলেন, সদ্য সমাপ্ত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট জেলার তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ প্রগতিশীল সমাজ উল্লসিত ও আনন্দিত। তিনি বলেন, এবার নির্বাচিত সাংসদেরা কাজ করার সুযোগ পেলে একদিকে যেমন জেলার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে অন্যদিকে জেলার নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা সংগঠিত ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় লালমনিরহাট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-১ ও ২ আসনে, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-১, ২ ও ৩ আসনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট- ১, ২ ও ৩ আসনে, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট- ১, ২ ও ৩ আসনে, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ আসনে এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ ও ৩ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

No comments:

Post a Comment