Thursday, March 27, 2014

পাঁচ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

রংপুর: শপথ নিতে এসে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া নবনির্বচিত ৫ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আগামী রোববার তাদের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

আদালত পরিদর্শক জতিন্দ্রনাথ শর্মা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারি থানার নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়্যারম্যান আবদুর রহমান আবদার, বোদা উপজেলা নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সফিউল্লাহ সুফি, ভাইস চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানি ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর বাসেত সাজ্জান

এদের মধ্যে আব্দুর রহমান আব্দার ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহাজান এর বিরুদ্ধে পুলিশের উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধাদান এবং সফিউল্লাহ সুফির বিরুদ্ধে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগেসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কর্যালয়ের সামনে থেকে তাদের গেফতার করা হয়। 

মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজেম হোসেন জানান, নবনির্বচিত উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানি ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর বাসেত সাজ্জানের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা আওয়ামী লীগ অফিসে অগ্নিসংযোগসহ ৯টি করে মামলা রয়েছে। 

শপথ অনুষ্ঠান থেকে মিঠাপুকুর উপজেলার চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত এবং বোদা উপজেলার চেয়াম্যান জনাব শফিউল্লাহসহ নবনির্বাচিত চেয়াম্যানদের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর মহানগর জামায়াতের আমীর মাহবুবুর রহমান বেলাল, সেক্রেটারি অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মাওলানা এ টি এম আজম খান ও সেক্রেটারি অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ সালাফী।  

Monday, March 17, 2014

মা আমাকে মন্ত্রী বানাতে চেয়েছিলেন

রংপুর: ‘আমার মা আমাকে মন্ত্রী হতে বলেছিলেন। আমি রাজি হইনি। আমি আমার মাকে বলেছি, মন্ত্রীত্ব নয় আমি দেশের মানুষের সেবা করতে চাই।’

সোমবার সকালে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে নিজ বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।

জয় বলেন, ‘যখন ছোট ছিলাম আমার মা আমাকে ও আমার বোনকে বলেছিলেন, তোমার নানার যে পরিচয়-সুনাম, তার প্রতি বাংলার মানুষের যে ভালোবাসা, কোনদিন এমন কিছু করবে না, যাতে এই নামটির বদনাম হয়। আমরা সে কথা রেখেছি। আমরা বাবার মতো পড়ালেখা শিখেছি। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। আমরা বাংলাদেশে কোনদিন কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হইনি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমরা এই মহান নেতার বদনাম হতে দেব না। আমার মা আমাকে বলেছিল এসো তোমাকে মন্ত্রী বানিয়ে দেই। আমি বলেছি, আগে দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করবো। ভোট ও পদ ওগুলো পরে হবে।’

উপজেলা নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে জয় আরো বলেন, ‘বিশ্বে নির্দলীয় বলে কোনো নির্বাচন হয় না। উন্নত বিশ্বের সব দেশে সব (স্থানীয় সরকার) নির্বাচন দলীয়ভাবে হয়ে থাকে।’

তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায় তখন কেউ হারাতে পারে না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দেয়া সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করায় দেশবাসী আবারও আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করেছে। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ লাভবান হয়।’

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোতাহারুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন- বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক এমপি, জাতীয় সংসদের হুইপ এবং দিনাজপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য এসএম কামাল।

এর আগে জয় তার বাবা বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া ও দাদা-দাদীর কবর জিয়ারত করেন। তিনি তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। এরপর তিনি কর্মী সভার মঞ্চে উঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলের মালা দেন। এবং বঙ্গবন্ধুর ৯৪তম জন্মদিনের কেক কাটেন।

এ সময় পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিজয়ী ভাইস চেয়ারম্যান মোনায়েম সরকার মানু জয়কে ফুলেল শুভেচ্ছা দেন।

প্রতিমন্ত্রী পলক এমপি বলেন, ‘পীরগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ কিলোমিটার করে রাস্তা পাকা করা হবে।’

প্রতিমন্ত্রী বিপু এমপি বলেন-‘পীরগঞ্জের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হবে। শুধু তাই নয়, যে নেতা আমাদের দিকে একবার তাকালে উন্নয়ন হয়, সেই নেতা পীরগঞ্জের মাটির সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। দেশের উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে।’

প্যান্ট আর টি-শার্ট পরিহিত তরুণ এ রাজনীতিক কালো চশমা চোখে মঞ্চে উঠতেই স্লোগান আর করতালিতে মুখর হয়ে উঠে জয় সদন চত্বর।

তিনি বক্তব্যের একপর্যায়ে স্থানীয় নেতাদের অনুরোধ করে বলেন, ‘দেশের জন্য কাজ করেন, এলাকার জন্য কাজ করেন।’

কর্মীসভায় উপস্থিত ছিলেন, রংপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সহসভাপতি ছায়াদত হোসেন বকুল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রেজাউল করিম রাজু, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের আন্তঃপেশা ও সমন্বয় বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সাঈদ রেজা শান্ত, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শাহিদুল ইসলাম পিন্টু, ছাত্রলীগ ক্দ্রেীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, রংপুর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি, উপজেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক তাজিমুল ইসলামসহ জেলা ও উপজেলার নেতারা।

Wednesday, March 12, 2014

'পোকা তাড়াবে ‘ডিজিটাল কীটনাশক’

রংপুর: পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে এখন আর জমিতে কীটনাশক ছিটাতে হবে না। হবে না কোনো পরিবেশদূষণ, নষ্ট হবে না মাটির উর্বরতা শক্তি। শব্দ শুনিয়েই তাড়ানো যাবে পোকামাকড়। এ জন্য সৌরশক্তি ব্যবহার করে একটি যন্ত্র বানিয়েছেন রংপুরের একদল শিক্ষার্থী। যন্ত্রটি তৈরি করতে খরচ পড়েছে মাত্র এক হাজার ৩৭৫ টাকা। এরপর বিনা খরচে ওই যন্ত্র ব্যবহার করে বারবার পোকামাকড় তাড়ানো যাবে। তাঁরা যন্ত্রটির নাম দিয়েছেন ‘ডিজিটাল কীটনাশক মেশিন’।

যন্ত্রটি তৈরি করেছেন রংপুরের ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইটি) কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড মেকানিক্যাল বিভাগের বিভিন্ন সেমিস্টারের ২৬ জন শিক্ষার্থী। গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা রংপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ডিজিটাল মেলায় যন্ত্রটি প্রদর্শন করে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিজিটাল মেলার আয়োজকদের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি) মিজানুর রহমান বলেন, যন্ত্রটি পরীক্ষা করে এর কার্যকরিতা পাওয়া গেছে।

যন্ত্রটি দিয়ে মশা-মাছিও তাড়ানো সম্ভব। সে জন্য এর শব্দতরঙ্গে খানিকটা পরিবর্তন আনতে হবে বলে জানান এর প্রধান উদ্যোক্তা আইইটির ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র জিয়াউদ্দিন পাইলট।

যন্ত্রে যা আছে: যন্ত্রটি প্রস্থে দুই ফুট এবং উচ্চতায় তিন ফুট। এর চারদিকে চারটি ছোট স্পিকার আছে, যা দিয়ে চারপাশে শব্দ বের হয়। একটি ড্রাইসেল ব্যাটারি, একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি), একটি সোলার প্যানেল, একটি চিপ, একটি টুইটার ও কিছু বৈদ্যুতিক তার রয়েছে।

যেভাবে কাজ করে: ডিজিটাল যন্ত্রটির কার্যকরিতা দেখতে গত বৃহস্পতিবার আইইটির ১২-১৩ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই প্রতিবেদক রংপুর নগরের শালবন মিস্ত্রিপাড়া এলাকার একটি ধানখেতে যান। শিক্ষার্থীরা প্রথমে ধানখেতে যন্ত্রটি রাখেন। এর ওপর সোলার প্যানেল বসিয়ে সূর্যের দিকে তাক করে রাখেন। এরপর যন্ত্রের একটি সুইচ অন করেন। ঠক করে শব্দ হয়। কাঁপুনি দিয়ে যন্ত্রটি চালু হয়। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আর শব্দ বোঝা যায় না। কিন্তু যন্ত্রটি চলছিল। কয়েক সেকেন্ড পরেই দেখা যায়, যন্ত্রের আশপাশের পোকামাকড় ছোটাছুটি করে পালাচ্ছে। যন্ত্রটির ব্যাপারে জিয়াউদ্দিন বলেন, এটি চালু করার পর একধরনের অডিও সিগন্যাল ও আলট্রাসাউন্ডের ভয়ে পোকামাকড় পালিয়ে যায়। এটি দূষণমুক্ত শব্দ, যা শুধু পোকামাকড় বুঝতে পারে।

যেভাবে তৈরি: ফসল ফলাতে জমিতে প্রতিনিয়ত রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়, যা পরিবেশ ও মানুষের শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। কীটনাশক ছাড়া পোকামাকড় দমনের উপায় নিয়ে এক বছর ধরে কাজ করতে থাকেন জিয়াউদ্দিন।

জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘যন্ত্রটি তৈরি করতে তিন মাস সময় লেগেছে। প্রথমে একধরনের শব্দ সৃষ্টি করে খেতের মধ্যে প্রয়োগ করতে থাকি। এই শব্দ শোনার পর পোকামাকড় দূরে পালিয়ে যায়। যতদূর শব্দ যায়, ততদূর সরে যায়। ছোট্ট এই যন্ত্র চালু করলে প্রায় দেড় শতাংশ এলাকায় কোনো পোকামাকড় ভিড়তে পারবে না। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় যন্ত্রটি বসিয়ে চালু করে পোকামাকড় তাড়ানো যায়। তবে শব্দের দূরত্ব বাড়ানো যাবে। এ জন্য যন্ত্রটি বড় আকারে বানাতে হবে।’ জিয়াউদ্দিন আরও বলেন, যন্ত্রটি খুব সহজে বহনযোগ্য। একবার তৈরি করলে কয়েক বছর চালানো যাবে। এক খেত থেকে অন্য খেতেও নেওয়া যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর কার্যালয়ের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, কীটনাশক বারবার কিনে জমিতে দিতে হয়। অথচ ডিজিটাল যন্ত্রটি তৈরি করতে একবারই খরচ হয়। অল্প খরচে পরিবেশদূষণ ছাড়াই পোকামাকড় তাড়ানো যায়।